Xclusive জোছনার_শেষ_আলো

Sagor007

Visitor

0

0%

Status

Offline

Posts

1

Likes

0

Rep

0

Bits

13

1

Months of Service

LEVEL 1
80 XP
বাসার গেইটের সামনে অনেকক্ষণ ধরে হাটাহাটি করছি কিন্তু বাসার ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছি না। হঠাৎ কে যেন আমায় পেছন থেকে বললো,
- অনাথ কুকুরের বাচ্চার মত আমার বাসার সামনে
এইভাবে ঘুরঘুর করছিস কেন?

পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বাবা। দুই হাত ভর্তি বাজার। বাবাকে দেখে মাথাটা নিচু করে বললাম,
-- আমি কুকুরের বাচ্চা হলে কুকুরটা কে?

বাবা রেগে গিয়ে বাজারের ব্যাগ থেকে বড়সাইজের একটা মুলা বের করে বললো,
- তোর মত কুলাঙ্গারকে মুলা দিয়ে পিটিয়ে সোজা করে ফেলা উচিত। পালিয়ে বিয়ে করেছিস ভালো কথা, কিন্তু বউকে নিয়ে বাসায় না এসে এই দেড় বছর কোথায় ছিলি?

আমি মাটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- ভয়ে আসতে পারি নি বাবা

বাবা চোখ থেকে চশমাটা খুলে চশমার গ্লাসটা পরিষ্কার করতে করতে শান্ত গলায় বললো,
- একা এসেছিস না কি বউমাকেও সাথে এনেছিস?
আমি বললাম,
-- একা এসেছি

বাবা বাসার গেইটের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-বউমাকে নিয়ে তবেই বাসার ভিতর ঢুকবি তার আগে না

আমি মাথা নিচু করে রইলাম। কোন উত্তর দেই নি

ভালোবেসে শ্রাবণীকে পালিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের পর শ্রাবণীকে নিয়ে আর বাসায় আসা হয় নি। আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্ণেল। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিলেও এখনো মেজাজটা সেই কর্ণেলের মতই আছে। সেই ভয়েই শ্রাবণীকে নিয়ে বাবার সামনে আর দাঁড়ানো হয় নি
|
|

রিফাতের অফিসে গিয়ে দেখি রিফাত টেবিলের উপর রাখা ফাইলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি হালকা গলা কাশি দিতেই রিফাত আমার দিকে তাকালো। আমাকে দেখেই অবাক হয়ে বললো,
- তুই এইখানে?
আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
-- কেমন আছিস দোস্ত?

রিফাত রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- তোর মত বন্ধুর মুখ থেকে দোস্ত ডাক শোনার থেকে শত্রুর মুখ থেকে গালি শোনা অনেক ভালো। সাপকেও মানুষ এইভাবে পিটিয়ে মারে না তুই সেদিন আমাকে যেভাবে পিটিয়ে ছিলি
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-- দোস্ত আমায় মাফ করে দে

রিফাত আমার কথা শুনে চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
- আরে দূর, ভুল তো আমি করেছিলাম। মাফ আমি চাইবো। আসলে সারা রাত উল্টো পাল্টা জিনিস দেখতে দেখতে এমন একটা অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো যে, দিনের বেলাতেও এই জিনিসগুলো মাথায় ঘুরতো। তাই সেদিন শ্রাবণীর ভিজে যাওয়া শরীরের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। তুই সেদিন যা করেছিলি একদম ঠিক করেছিলি। তোর জায়গায় আমি থাকলে আমিও সেটাই করতাম যেটা তুই করেছিলি। ভালোবাসার মানুষের দিকে কেউ খারাপ নজরে তাকাবে সেটা কোন সত্যি কারের প্রেমিক কখনোই সহ্য করবে না

রিফাতের অফিস থেকে যখন বের হয়ে যাবো তখন হঠাৎ রিফাত আমায় পিছন থেকে ডেকে বললো,
-তুই খুব ভাগ্যবান রে কারণ শ্রাবণীর মত এত্ত ভালো একটা মেয়েকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পেয়েছিস। একবার শ্রাবণীকে নিয়ে আসিস। ওর কাছে আমার এখনো ক্ষমা চাওয়া হয় নি

রফিতের কথা শুনে আমি কিছু বললাম না শুধু মুচকি হেসে ওর অফিস থেকে বের হয়ে আসলাম...
|
|

বাসের টিকেট কাটতে যখন কাউন্টারে গেলাম তখন খেয়াল করলাম শ্রাবণীর বাবা দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণীর বাবা আমাদের হাই স্কুলের ইংলিশ টিচার ছিলেন। আমি উনার সামনে গিয়ে কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।
উনি তখন আমায় বললো,
-তুই অংকেতে যতটা ভালো ছিলি ইংলিশে ঠিক ততটাই খারাপ ছিলি। তোকে ইংলিশ শিখাতে গিয়ে আমি তোর পিঠে কয়টা যে বেত ভেঙেছি তার কোন হিসেব নেই। আমি যখন তোকে মারতাম তখন তুই নিচের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলতি। এতদিন বুঝতে পারি নি কি বলতি কিন্তু যেদিন তুই আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেলি সেদিনেই বুঝতে পেরেছিলাম তুই আসলে বিড়বিড় করে কি বলতি

স্যার( শ্রাবণীর বাবা) কথাগুলো বলে কতক্ষণ নিরব রইলেন। তারপর চোখের কোণে জমে থাকা জলটাকে মুছতে মুছতে আমায় বললেন,
-বাবারে, আমি না হয় তোর পিঠে মেরেছিলাম তাই বলে তুই আমার বুকে মারবি?

আমি কোন উত্তর দিতে পারছিলাম না। কারণ আমার কোন উত্তর জানা নেই।
স্যার একটা বক্স আমার হাতে দিয়ে বললো,
- আমার মেয়েটা ওর মার হাতের বানানো আচার খেতে খুব পছন্দ করে। ওরে বলে দিস ওর মা ওর জন্য ১৩ রকমের আচার বানিয়ে রেখেছে। যদি কখনো সময় হয় সে যেনো আচার গুলো এসে নিয়ে যায়....
---
------



রাত ১২ঃ২০ বাজে। শ্রাবণী ট্রেনে করে ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী যাচ্ছে। বারবার শ্রাবণী নিজে নিজের মনকে বলছে, সে যা করছে একদম ঠিক করছে৷ এইভাবে প্রতিদিন একটু একটু শেষ হওয়ার চেয়ে একে বারেই সব কিছু শেষ করে দেওয়াই ভালো। এই শীতের মাঝেও ওর সারা শরীর ঘামছে। গলা বারবার শুকিয়ে আসছে। পানির বোতলটা বের করার জন্য যখন শ্রাবণী ব্যাগের চেইনটা খুললো তখন সে খেয়াল করলো একটা ছোট বক্স আর একটা চিঠি। চিঠিটা পিয়াসের লেখা। শ্রাবণী অবাক হয়ে চিঠিটা পড়তে লাগলো,

শ্রাবণী,
চিঠিটা তুমি যখন পড়বে তখন তুমি আমার থেকে অনেকটা দূরে। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসাটাও পাল্টে যায়। হয়তো তোমার আর আমার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে। তাছাড়া এই নিষ্ঠুর শহরে ১৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে আর যায় হোক বউয়ের ভালোবাসা পাওয়া যায় না।
শ্রাবণী তোমার মনে আছে? বিয়ের পর প্রথম যেদিন তোমায় নিয়ে শপিং করতে যায় তখন তোমায় ১৫০০ টাকা দিয়ে একটা শাড়ি কিনে দেই। তুমি হাসি মুখে শাড়িটা নিলেও তোমার চোখ আটকে ছিলো ৫ হাজার টাকা দামের শাড়ির দিকে। স্ত্রীকে তার পছন্দের জিনিস কিনে দিতে না পারা একজন স্বামীর জন্য কতটা কষ্টের সেটা তুমি বুঝবে না। তুমি আমায় মাফ করে দিও। বিয়ের আগে তোমায় অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলাম কিন্তু পালিয়ে বিয়ে করার পর বুঝতে পেরেছি বাস্তবতা কতটা কঠিন। বিয়ের আগে তোমায় স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম আমরা বিয়ে করে দেশের বাহিরে যাবো ঘুরতে অথচ বিয়ের পর তোমায় নিয়ে কক্সবাজারেও ঘুরতে যাওয়ারও সাধ্য আমার হয় নি। তোমায় স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম বিয়ের পর সোনা দিয়ে তোমায় মুরিয়ে রাখবো অথচ বাস্তবে আমি তোমায় এক রতি সোনার কিছু কিনে দিতে পারি নি। তোমায় বলেছিলাম আমার সমস্ত সময় তোমায় দিবো। কিন্তু বিয়ের পর যখন সংসারের দ্বায়িত্ব আমার কাঁধে পড়লো তখন আমি চাইলেও তোমায় তেমন সময় দিতে পারি নি। আমার সাথে থাকলে এইভাবেই প্রতিদিন তোমার একটা একটা করে স্বপ্ন মরে যাবে। তাই যেটা করেছো ভালোই করেছো।
বক্সটাতে তোমার মায়ের বানানো আমের আচার আছে। আর যদি সময় পাও তানবীরকে নিয়ে তোমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করে এসো। তোমার মা তোমার জন্য ১৩ রকমের আচার বানিয়ে রেখেছে। লাগেছের বাম দিকের কোণায় ৫ হাজার টাকা আছে। বিপদে হয়তো তোমার টাকাটা কাজে লাগবে। ব্যাগে মাফলারটা দিয়ে দিয়েছি গলায় প্যাচিয়ে নিও তা না হলে ঠান্ডায় তোমার আবার গলা ব্যাথা শুরু হবে। একা যেহেতু এতটা পথ যাবে একটু সাবধানে যেও আর তানবীরকে বলো আগে থেকেই স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে।
ভালো থেকো তুমি..

ইতি
একজন খুনি যে কিনা প্রতিদিন তোমার স্বপ্ন গুলো খুন করেছে

শ্রাবণী চিঠিটা পড়ছিলো আর চোখের জলে কাগজটা ভিজে যাচ্ছিলো। চিঠিটা পড়ার পর শ্রাবণীর মনে হলো পিয়াস এই ট্রেনের মধ্যেই আছে। কারণ পিয়াস কখনোই ওকে এত রাতে একা ছাড়বে না...
|
|

আড়াল থেকে খেয়াল করলাম শ্রাবণী এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। হঠাৎ আমায় দেখতে পেয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো। রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- যখন জানতে পারলে নিজের বউ অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করে তখন বউয়ের দুইগালে দুইটা কষে থাপ্পড় মারতে পারলে না? শুধু নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসলেই হয় না মাঝে মধ্যে একটু কঠোর হতে হয়। সব সময় যদি বউকে ভালোবাসো তাহলে একদিন বউয়ের কাছে তোমার ভালোবাসাটা সস্তা হয়ে যাবে তাই এখন থেকে মাঝে মধ্যে বউকে শাসন করবে বুঝলে?

আমি কিছু বললাম না। শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ শ্রাবণী আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
- প্লিজ আমায় মাফ করে দাও। বিশ্বাস করো আজকের পর তোমাকে আমি তোমার চেয়েও বেশি ভালোবাসবো। আর কখনো ভুল করবো না। নিজেকে শুধরানোর একটা সুযোগ দাও প্লিজ

আমি শ্রাবণীকে শক্ত করে আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছি আর ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি। মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা সরে এসেছে। তাইতো অন্ধকার রাতটা হঠাৎ জোছনার আলোতে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে....

#_জোছনার_শেষ_আলো

সসমাপ্ত
 

56,559

Members

327,789

Threads

2,739,388

Posts
Newest Member
Back
Top